স্পাইনাল ক্যানাল স্টেনোসিস
স্পাইনাল ক্যানাল স্টেনোসিস এমন একটি অবস্থা যেখানে মেরুদণ্ডের ক্যানালগুলো সরু (Narrow) হয়ে যায়। এটি সুষুম্নাকাণ্ড এবং স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
মেরুদন্ডের খালের সংকীর্ণতার (Spinal Canal Stenosis) দুটি প্রধান প্রকার রয়েছে: লাম্বার স্টেনোসিস এবং সার্ভিকাল স্টেনোসিস। লাম্বার স্টেনোসিস পিঠের নীচের অংশে দেখা যায় এবং সার্ভিকাল স্টেনোসিস ঘাড়ের অঞ্চলে দেখা যায়।
কি কারণে হয়?
সাধারণত বার্ধক্যজনিত কারণে মেরুদণ্ডের অবক্ষয়ের ফলে স্টেনোসিস দেখা দেয়। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেরুদণ্ডের হাড়, ডিস্ক এবং লিগামেন্টগুলির নমনীয়তা কমে যায়।
আর ফুলে ওঠার কারণে মেরুদণ্ডের ক্যানাল গুলি সঙ্কুচিত করে তোলে। এটি হাড়ের স্পারের অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণেও হতে পারে।
স্পাইনাল ক্যানাল স্টেনোসিসের লক্ষণ
স্পাইনাল স্টেনোসিসে প্রায়শই কোন উপসর্গ দেখা যায় না। যখন লক্ষণগুলি (Symptoms) দেখা দেয় তখন সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যায়।
এক বা উভয় পায়ে ব্যথা
পিঠে ব্যথা
অসাড়তা
হাত, পায়ে শিহরণ বা দুর্বলতা
হাঁটতে এবং ভারসাম্য রাখতে সমস্যা
ঘাড়ে ব্যথা
অন্ত্র বা মূত্রাশয়ের সমস্যা
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
এন্ডোস্কোপির প্রয়োজনীয়তা, খরচ, সময় ও অন্যান্য বিষয়ে জানুন
মাথার সিটি স্ক্যান এর প্রয়োজনীয়তা
লিভার ফাংশন টেস্ট এর প্রয়োজনীয়তা, খরচ এবং অন্যান্য বিষয়
সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই এর পার্থক্য
পি ই টি স্ক্যান করার প্রয়োজন, পদ্ধতি, খরচ, সময় এবং অন্যান্য
স্পাইনাল ক্যানাল স্টেনোসিস পরীক্ষা
স্পাইনাল ক্যানাল স্টেনোসিস নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা প্রয়োজন হয়। যেমন এক্স-রে (X-ray), সিটি স্ক্যান (CT scan) বা এমআরআই (MRI) ইত্যাদি।
পিঠের একটি এক্স-রে হাড়ের পরিবর্তনগুলি সঠিকভাবে দেখাতে পারে। ফলে মেরুদণ্ডের খালের (Canal) কোনো সমস্যা থাকলে তা তুলে ধরে।
এমআরআই একটি শক্তিশালী চুম্বক এবং রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে শক্ত এবং নরম টিস্যুর বিস্তারিত চিত্র তৈরি করে। পরীক্ষাটি ডিস্ক এবং লিগামেন্টের ক্ষতি সনাক্ত করতে পারে।
যদি কোনো কারণে এমআরআই না করতে পারেন, তবে আপনার সিটি স্ক্যানের প্রয়োজন হতে পারে। পরীক্ষাটি বিভিন্ন কোণ থেকে নেওয়া চিত্রগুলিকে পর্যালোচনা করে নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করে।
কি কি চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত?
আপনার ডাক্তার প্রদাহ কমাতে কিছু বিশেষ ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করতে পারেন যেমন, নন স্টেরয়েডাল এন্টি ইনফ্লামেটরী ড্রাগস, এন্টি ডিপ্রেসেন্টস, এন্টি সিজার ড্রাগস ইত্যাদি।
কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োজন হতে পারে।
অবস্থা জটিল হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে, যেমন - ল্যামিনেক্টমি, ল্যামিনোটমি বা ল্যামিনোপ্লাস্টি ইত্যাদি। সার্জারির (Surgery) মধ্যে মেরুদণ্ডের একটি অংশ, হার্নিয়েটেড ডিস্ক বা হাড়ের স্পার অপসারণ করা হতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক ব্যায়াম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
যে ব্যায়ামগুলো সাহায্য করতে পারে
বেশ কয়েকটি ব্যায়াম রয়েছে যা মেরুদণ্ডের খালের স্টেনোসিসের লক্ষণগুলি উপশম করতে সহায়তা করতে পারে। এই ব্যায়ামগুলি নমনীয়তা উন্নত করতে, মেরুদণ্ডকে সমর্থনকারী পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে এবং স্নায়ুর উপর চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
স্ট্রেচিং ব্যায়াম: মেরুদণ্ডকে সমর্থন করা পেশীগুলিকে প্রসারিত করে এমন ব্যায়াম গুলো নমনীয়তা উন্নত করতে এবং স্নায়ুর উপর চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। স্ট্রেচিং ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ, কাফ স্ট্রেচ এবং স্পাইনাল টুইস্ট।
স্ট্রেন্থ ব্যায়াম: মেরুদণ্ডকে সমর্থন করে এমন পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে পারে এমন ব্যায়াম গুলো এই সমস্যায় উপকারে আসতে পারে। যেমন পেলভিক টিল্ট, ম্যাকেঞ্জি এক্সটেনশন ব্যায়াম ইত্যাদি।
অ্যারোবিক ব্যায়াম: এই ধরণের ব্যায়ামগুলো ফিটনেস উন্নত করতে ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অ্যারোবিক ব্যায়ামের উদাহরণ হলো সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, হাঁটা ইত্যাদি।
প্রশ্ন ও উত্তর :
স্পাইনাল ক্যানাল স্টেনোসিস কি গুরুতর রোগ?
হ্যাঁ। কারণ মেরুদণ্ডের স্টেনোসিস পায়ের শক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস করতে পারে। এর কারণে গুরুতর ব্যাথা সৃষ্ট হতে পারে। এমনকি পেশীর দুর্বলতা না থাকলেও আপনার কাজ করার এবং জীবন উপভোগ করার ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
স্পাইনাল স্টেনোসিস রোগে হাঁটা কি ভাল?
স্পাইনাল স্টেনোসিসের জন্য হাঁটা একটি ভালো ব্যায়াম। তবে যদি হাঁটা আপনার লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে দেয় তবে একটি ভিন্ন ব্যায়াম বেছে নিন।
মেরুদণ্ডের স্টেনোসিস কি অপারেশন ছাড়া সারবে?
হ্যাঁ, প্রকৃতপক্ষে মেরুদণ্ডের এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ৫% এরও কম রোগীর অপারেশনের প্রয়োজন হয়। স্টেনোসিস থেকে মুক্তি পেতে অপারেশনের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরণের ওষুধের সাহায্য নেওয়া হয়।
এই সমস্যায় ঘুমের অবস্থান কী হওয়া উচিৎ?
মেরুদণ্ডের স্টেনোসিসে আক্রান্তরা একদিকে পাশ ফিরে হাঁটু পেটের দিকে বাঁকানো অবস্থায় শুয়ে আরাম পান। আরেকটি বিকল্প হল একটি সামঞ্জস্যযোগ্য বিছানা বা রিক্লাইনারে ঘুমানো, যেটিতে মাথা এবং হাঁটুকে উঁচু করে রাখা যায়।
এই সমস্যা এড়িয়ে গেলে কি হতে পারে ?
উপসর্গগুলি বা সমস্যা গুলি এড়িয়ে গেলে অসাড়তা, ব্যথা এবং পেশী দুর্বলতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকবে ও একটি জটিল জীবনযাত্রার দিকে নিয়ে যাবে।
স্টেনোসিসের জন্য যোগব্যায়াম কি ভাল?
হ্যাঁ, যোগব্যায়ামের মাধ্যমে ভঙ্গি সংশোধন ও মেরুদণ্ডের উন্নতির ফলে স্টেনোসিসের সমস্যা দূর করতে এবং রোগটির বৃদ্ধি রোধ করতে যথেষ্ট উপকারী ভূমিকা পালন করে।
স্টেনোসিসে কোন খাবারগুলি এড়ানো উচিত?
যে খাবার গুলি এড়িয়ে যাবেন যেগুলি হলো চিনিযুক্ত খাবার, সব্জির তেল, রিফাইনড শস্য, দুগ্ধজাত পণ্য, প্রক্রিয়াকৃত ভুট্টা, লাল মাংস, কেমিক্যালযুক্ত খাবার ইত্যাদি।
মেরুদণ্ডের স্টেনোসিসে সিঁড়ি চরতে পারি কি?
সিঁড়ি বেয়ে ওঠার ফলে মেরুদণ্ডের খালে (Canal) জায়গার পরিমাণ কমে যায়। এটি সাময়িকভাবে মেরুদণ্ডের স্টেনোসিসের প্রভাবকে বাড়িয়ে ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গের দিকে নিয়ে যায়।
স্টেনোসিসে কোন ব্যায়াম ভালো?
যদি আপনার ডাক্তার আপনাকে অভয় দেন তবে আপনি ব্যায়াম করতে পারেন। এক্ষেত্রে হাঁটা এবং সাঁতার উভয়ই কটিদেশীয় মেরুদণ্ডের স্টেনোসিসের জন্য দুর্দান্ত ব্যায়াম।
স্টেনোসিসে কোন খাবারগুলি ভালো?
স্বাস্থ্যকর প্রোটিন যেমন চর্বিহীন মাংস, মাছ, ডিম ইত্যাদি হাড় ও তরুণাস্থির সঠিক অবস্থা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যালসিয়াম বয়সের সাথে সাথে হাড়ের শক্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ম্যাগনেসিয়াম নামক খনিজটি হাড়ের ঘনত্ব এবং পেশীর শক্তি বজায় রাখতে খুবই উপকারী। কলা, অ্যাভোকাডো, বাদাম, পালং শাক, বাদামী চাল এবং ব্রকোলি খাবারে যুক্ত করুন।
ভিটামিন ডি 3 হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য দুর্দান্ত, যেমন ডিমের কুসুম, পনির, ফ্যাটি মাছ যেমন টুনা, ম্যাকেরেল এবং স্যামন, কমলার রস, সয়া দুধ, এবং কিছু দুগ্ধজাত পণ্য।
স্টেনোসিসে দীর্ঘ সময়ের জন্য বসে থাকলে ক্ষতি হবে?
এই সমস্যায় অতিরিক্ত সময়ের জন্য বসা কখনোই ভালো নয়। যদিও বসে থাকলে মেরুদণ্ডের স্টেনোসিসের ব্যাথা কিছুটা উপশম হতে পারে। তবে বেশিক্ষণ বসে থাকা অনুচিত। প্রতি ৩০ থেকে ৬০ মিনিটের বসার পর অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য ঘোরাঘুরি করুন, এতে আপনার মেরুদণ্ডের ওপরে দীর্ঘস্থায়ী চাপ আসা প্রতিরোধ করতে পারে।
স্পাইনাল স্টেনোসিসে মৃত্যু হতে পারে কী?
এই রোগটি আপনার চলাফেরা, ভারসাম্য, দক্ষতা, অন্ত্র বা মূত্রাশয়ের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এটির কারণে বাহু বা পায়ে ব্যথা, দুর্বলতা দেখা যায়। আর যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি পক্ষাঘাত (Paralysis) এবং মৃত্যু কারণও হতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ