কার্বন ডাই-অক্সাইড
কার্বন ডাই-অক্সাইড বা CO2 গ্যাস নিয়ে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ভাবনাচিন্তা কাজ করে। যেমন এটি একটি গ্রিন হাউস গ্যাস। এটির মাধ্যমে পরিবেশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তৎসহ মানব জীবনের জন্য এটি একটি প্রাণঘাতী গ্যাস। তাই এটি থেকে যতটা দূরে থাকা সম্ভব ততই ভালো।
আপনার মনেও নিশ্চয়ই এই ধরনের প্রশ্ন উঁকি মারে সবসময়। তবে চলুন কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে অনেক কাছ থেকে দেখি আর বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি এটি কি সত্যিই মানুষের জন্য ক্ষতিকর? নাকি এর কিছু ভাল দিকও রয়েছে।
যখন উপকারী
আমাদের মনে রাখতে হবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কিন্তু পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বর্ণহীন, হালকা গন্ধ যুক্ত এবং টক স্বাদ যুক্ত একটি প্রয়োজনীয় গ্যাস।
কার্বন-ডাই-অক্সাইড না থাকলে আমাদের পৃথিবীটা একটি বরফের গোলাক হয়ে যেত। কারণ সূর্য থেকে আসা তাপ কিছুটা পরিমাণ সংরক্ষণ করে রাখে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মত গ্রীন হাউজ গ্যাস গুলো। আর পৃথিবীর সব জল জমে বরফের চাদরে মুরে যেত।
এটি আমাদের শরীরে রক্তের পিএইচ (pH) লেভেল কে নিয়ন্ত্রণ করে। যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয়।
কার্বন-ডাই-অক্সাইড না থাকলে আমরা নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া চালাতে পারতাম না। শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রতিটি কোষে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। এরপর এটি রক্তের মাধ্যমে ফুসফুস হয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। পরিবর্তে অক্সিজেন ভেতরে ঢোকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন শ্বসন প্রক্রিয়া এবং দেহের শক্তি উৎপাদনের জন্য কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কতটা প্রয়োজনীয়তা আছে।
আবার অপরদিকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড না থাকলে ফটোসিন্থেসিস অর্থাৎ সালোকসংশ্লেষ বন্ধ হয়ে যেত। ফলে প্রকৃতি বাচতো না। পৃথিবী হয়ে যেত একটা প্রকাণ্ড মরুভূমি।
এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসটির বিপুল ব্যবহার রয়েছে। যেমন অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার এই সমস্ত যন্ত্র গুলিতে এটির ব্যবহার হয়। এছাড়াও লাইফ জ্যাকেট ফোলানোর জন্য, কয়লা বিস্ফোরণের জন্য, প্লাস্টিক এবং রাবার তৈরীর জন্য ফেনা তৈরি করার কাজে, গ্রীন হাউজ গাছগুলির বৃদ্ধির জন্য এবং আরো অন্যান্য কাজে কার্বন ডাই অক্সাইড এর ব্যবহার হয়ে থাকে।
সর্তকতা অবলম্বন করুন
তবে এটির যেমন ভাল দিক আছে, তেমনিই এটির ব্যপারে সচেতন না হলেও বিপদ বাড়বে। কারণ পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকা প্রয়োজন। এটির বেশি বা কম উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি হবে।
কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে গেলে যেমন গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য পরিবেশ ক্ষতির দিকে যাবে। তেমনি মানব শরীরও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কেননা কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর বৃদ্ধি শরীরের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের মাত্রা কমাতে থাকে। আর যখন আপনার শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পাবেনা, তখন ধীরে ধীরে কার্যকারিতা হারাতে থাকবে।
এছাড়াও CO2-এর প্রভাব বেশি হলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত প্রভাব তৈরি করতে পারে, যেমন মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, অস্থিরতা, শ্বাস নিতে অসুবিধা, ঘাম, ক্লান্তি, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, খিঁচুনি ইত্যাদি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
এন্ডোস্কোপির প্রয়োজনীয়তা, খরচ, সময় ও অন্যান্য বিষয়ে জানুন
মাথার সিটি স্ক্যান এর প্রয়োজনীয়তা
লিভার ফাংশন টেস্ট এর প্রয়োজনীয়তা, খরচ এবং অন্যান্য বিষয়
সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই এর পার্থক্য
পি ই টি স্ক্যান করার প্রয়োজন, পদ্ধতি, খরচ, সময় এবং অন্যান্য
উপসংহার
মনে রাখা জরুরী, অন্যান্য গ্যাসের মতো কার্বন-ডাই-অক্সাইডও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস। এর অতিরিক্ত মাত্রা যেমন পৃথিবী এবং প্রাণী দের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। তেমনি এর মাত্রা কমে গেলেও আমাদের জন্য ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হবে। তাই এটির একটি নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
আর এটা করতে পারে আমাদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি। তাই আসুন কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কে সঠিক রাখার জন্য যত বেশি সম্ভব গাছ রোপন করি। কারণ একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ প্রতিবছর প্রায় ২১ কিলোগ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে, আর সমপরিমাণ অক্সিজেন ত্যাগ করে। তাই এটিই খুব সহজ ও কার্যকরী পদ্ধতি পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর মাত্রা সঠিক রাখার।
যদি আজকের আলোচনা (কার্বন ডাই-অক্সাইড যখন উপকারী । When Carbon Dioxide is helpful) থেকে আপনার কিছুমাত্র উপকার হয় তবে অবশ্যই প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমরা এখন ইউটিউবে আছি, সার্চ করুন SACHETAN JIBAN
বি: দ্রঃ এই লেখাটি কেবল সাস্থ্য সুরক্ষা ও সচেততামূলক তথ্য সরবরাহ করে মাত্র। এটি কোনওভাবেই যোগ্য চিকিৎসার মতামতের বিকল্প নয়। আরও তথ্যের জন্য সর্বদা বিশেষজ্ঞ বা আপনার নিজস্ব চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
0 মন্তব্যসমূহ