Picture source: commons.wikimedia.com |
ব্রেইন ডেড মানে মৃত্যু ?
আমরা প্রায়সই ব্রেইন ডেড আর কোমা এই দুটোকে এক করে ফেলি। কোমায় থাকার পরেও মানুষ বেঁচে ফিরতে পারে। কিন্তু ব্রেইন ডেড হলে কোনভাবেই জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
মাথার বিভিন্ন বিভাগ
আমাদের মস্তক বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত। তার মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হল ব্রেইন স্টেম এবং কর্টেক্স। কর্টেক্স বড় এবং ব্রেইন স্টেম ছোট আকারের হয়ে থাকে।
কর্টেক্স আমাদের জীবনে বিশেষ দায়িত্ব গুলো পালন করে। যেমন পড়া, লেখা, কথা বলা ইত্যাদি কর্টেক্স এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। যদি কর্টেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে মানুষ কোমায় চলে যায়। অর্থাৎ তার স্বাভাবিক গতিবিধি বন্ধ হয়ে যায়।
কোমা ও ব্রেইন ডেড এর পার্থক্য
কিন্তু কোমায় থাকা অবস্থাতেও মানুষ ব্যথা অনুভব করতে পারে এবং তার শরীরের সমস্ত অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে থাকে। কোমায় মানুষ প্রায় কয়েক ঘন্টা থেকে শুরু করে কয়েক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে।
কিছু সময় চিকিৎসার পর কোমা থেকে মানুষ জীবন ফিরে পেতে পারে। কিন্তু ব্রেন ডেড হলে সেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। কারণ এটা হওয়া মানে কর্টেক্স এবং ব্রেন স্টেম দুটোই সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
এন্ডোস্কোপির প্রয়োজনীয়তা, খরচ, সময় ও অন্যান্য বিষয়ে জানুন
মাথার সিটি স্ক্যান এর প্রয়োজনীয়তা
লিভার ফাংশন টেস্ট এর প্রয়োজনীয়তা, খরচ এবং অন্যান্য বিষয়
সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই এর পার্থক্য
পি ই টি স্ক্যান করার প্রয়োজন, পদ্ধতি, খরচ, সময় এবং অন্যান্য
ব্রেইন স্টেম হল কেন্দ্রীয় নার্ভাস সিস্টেম এবং চেতনার কেন্দ্রবিন্দু। তাই ব্রেইন স্টেম নষ্ট হয়ে গেলে নার্ভাস সিস্টেম আর কাজ করতে পারবে না। শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। হার্ট পাম্পিং করা বন্ধ করে দেবে। তাই ধীরে ধীরে দেহের অন্যান্য অঙ্গর অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হতে থাকবে।
ব্রেইন ডেড কিভাবে হয়?
যদি মাথায় বড় ধরনের আঘাত লাগে অথবা বড় ধরনের স্ট্রোক হয়ে থাকে, তবে ব্রেন ডেড (brain dead) হওয়ার সম্ভাবনা তীব্র হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে হার্ট (heart) অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত মাথায় পাঠাতে পারে না। আর অক্সিজেনের অভাবে ব্রেন কোষ গুলো গলতে থাকে।
একবার ব্রেইন কোষগুলো গলতে শুরু করা মানেই ব্রেইন স্টেম এবং কর্টেক্সের মৃত্যু অবধারিত। এর ফলে রোগী শ্বাস নিতে সক্ষম হয় না। আর হরমোনের অভাবে দেহের অন্যান্য অঙ্গ ধীরে ধীরে তাদের কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয়।
কিভাবে বুঝবেন ব্রেইন ডেড?
বিভিন্ন উপায় বা সংকেতের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি রোগীর ব্রেইন ডেড হয়েছে কিনা। যদি রোগী নিশ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দেয়। শারীরিক মুভমেন্ট না করে। আলোকরশ্মিতে চোখের মনির কোন গতিবিধি না থাকে। এছাড়াও আরো কিছু অত্যাধুনিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই একজন রোগীর ব্রেন ডেড ঘোষণা করা হয়।
ডেথ সার্টিফিকেট
ব্রেইন ডেড ঘোষণা করা মানেই সেই দিনই রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। তাই ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু শংসাপত্র দেওয়া হয় উক্ত দিনেই। তারপরও রোগীকে হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে রাখা হয় এবং তার কিছু অঙ্গ কাজকর্ম করতে থাকে।
ধীরে ধীরে অবশ্য এই কাজের গতি মন্থর হতে থাকে। তবুও যেহেতু তার মাথার মৃত্যু হয়েছে তাই সেই দিনকেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় এবং ডেথ সার্টিফিকেট (death certificate) দেওয়া হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
ব্রেইন ডেড এর পরেও শ্বাস চলে?
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে ব্রেইন ডেড হওয়ার পরেও রোগীর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস চালু থাকে কিভাবে? যখনই এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয় তখনই রোগীকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। এরপর ব্রেন ডেড হয়ে গেলে বাইরে থেকে ভেন্টিলেটর এর মাধ্যমে হার্টকে চালু রাখা হয় কৃত্রিমভাবে।
মাথার মৃত্যু হলেও হার্ট কিন্তু তখনও চলতে পারে, কারণ এটি একটি অটোমেটিক পাম্পিং সিস্টেম। তাই যতক্ষণ এতে অক্সিজেন আসতে থাকবে ভেন্টিলেটর এর মাধ্যমে, ততক্ষণ এটি চালু থাকবে। তবে এটারও একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কয়েক ঘন্টা থেকে শুরু করে প্রায় কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত হার্ট পাম্পিং হতে থাকে, অর্থাৎ চালু থাকে।
0 মন্তব্যসমূহ