দেহের ভেতর আগুন জ্বলছে ...
ঠান্ডা আবহাওয়ায় থাকুন, বৃষ্টিতে ভিজে যান বা এসিতে থাকুন। যখন যেভাবে থাকুন না কেন। যদি দেহের ভেতর আগুন জ্বলে তাহলে সব পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে।
শরীরের এই আগুনের কারণে আপনার অকারণেই ব্রণ হতে থাকবে। অকালে চুল পাকতে থাকবে এবং চুল পড়তে থাকবে। কারণে-অকারণে এসিডিটির সমস্যা হবে।
এছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন রকমের সমস্যায় জর্জরিত হতে থাকবেন, যেমন মুখে ঘা হওয়া, শরীরে অ্যালার্জি সৃষ্টি হওয়া, অকারণেই প্রচন্ড পরিমাণে ঘাম হওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া এমনকি নাক দিয়ে রক্ত বেরোনোর সমস্যাও হতে পারে।
আপনার পিত্তে যদি সমস্যা থাকে অর্থাৎ পিত্তদোষ (Pitta Dosh) থাকে, তবে কিন্ত শরীরের ভেতর গরম হতে থাকবে। আর সেই গরম এতটাই হবে যে আপনার শারীরিক বিশেষ কিছু কিছু সমস্যা আপনাকে অস্থির করে তুলবে। চলুন তবে দেরি না করে জানার চেষ্টা করি কিভাবে শরীরের আগুন কে নিভিয়ে দিতে হয়।
পিত্ত দোষের কারণ কি?
আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে আরো অন্যান্য দৈনন্দিন জীবনে অনিয়মের কারণে এই রোগ সৃষ্টি হয় আমাদের শরীরে। যেমন অতিরিক্ত চিন্তা, অ্যালকোহল, স্মোকিং, অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণ, অনুপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এই রোগ আমাদের শরীরে সৃষ্টি হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
পিত্ত দোষ থেকে বেরোতে সেরা পাঁচটি উপায়
প্রথম উপায় :
প্রথমে হাফ বালতি ঠান্ডা জল নিন। সেই জলে কয়েকটি বরফের টুকরো আর সামান্য গোলাপজল দিয়ে দিন। এবার দুটো পা ডুবিয়ে রেখে দিন প্রায় 10 থেকে 15 মিনিট।
এই অবসরে আপনি বই পড়তে পারেন, মোবাইল বা টিভি দেখতে পারেন। জাস্ট সময়টা কাটানোর জন্য। মাঝেমধ্যে জল থেকে পা বের করে পায়ে মেসেজ করে নিতে পারেন। একে বলে হাইড্রো থেরাপি।
আমাদের শরীরে যত নার্ভ (Nerve) আছে সব পায়ের সাথে সংযুক্ত। হাইড্রো থেরাপি (Hydro Therapy) করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের যত টক্সিন আছে, এর মাধ্যমে তা বেরিয়ে যায়। তাই শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় অর্থাৎ পিত্তদোষ কাটানো সহজ হয়।
দিনে যে কোন সময়ে এই থেরাপি করা যায়। তবে রাতে এর কর্ম ক্ষমতা অনেক বেশি হয়। তাই চেষ্টা করুন রাতে শোয়ার আগে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে। এতে শরীরের টক্সিন বেরোবে, শরীর ঠান্ডা হবে এবং খুব ভালো হবে।
দ্বিতীয় উপায় :
১০ গ্রাম চাল নিন। সেটাকে ভালো করে শিলনোরায় থেঁতো করে নিন। এবার একটি মাটির ঘট নিন আর তাতে ৬০ থেকে ৭০মিলি জল দিন। তারমধ্যে চাল মিশিয়ে দিন। এবার ঢেকে রাখুন অন্তত চার থেকে পাঁচ ঘন্টা। তারপর সেই জল ছেঁকে নিয়ে খেয়ে নিন।
মনে রাখবেন খাবার ৩০মিনিট আগে খেলে সবচেয়ে ভালো হয়। সারা দিনে দুবার খেলে যথেষ্ট। এটা আপনার শরীরকে ইনস্ট্যান্ট কুল অর্থাৎ ঠান্ডা করে দেবে। এছাড়াও এতে আছে ভিটামিন বি যা মুখের ঘা তৈরি হওয়া আটকে দেয়।
এছাড়াও এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে মুখের দাগ, চামড়ায় র্যাস বেরোনো, মূত্র ত্যাগে সমস্যা, এসিডিটি, চুল পড়ে যাওয়া সমেত বিভিন্ন রকমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মনে রাখা জরুরী পলিশ ছাড়া চাল (Unpolished Rice) ব্যবহার করা বিশেষভাবে উপযোগী।
তৃতীয় উপায় :
এবার আপনার চাই চন্দন আর গোলাপজল। চন্দন যদি বেটে নিতে পারেন খুব ভালো। না হলে চন্দনের পাউডার কিনে নিন আর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে নিন। যে পেস্ট তৈরি হবে, সেটা কপালে ভালো করে প্রলেপ দিন। আর যদি আপনার ইচ্ছা হয় তবে সারা শরীরে মাখতে পারেন। কিম্বা চাইলে স্পেসিফিক কোন স্থানে যেখানে আপনার কোনও সমস্যা আছে যেমন, চুলকানি, ব্রণ, দাগ ইত্যাদি সমস্যা আছে সেখানে আপনি মাখতে পারেন।
এভাবে কিছুক্ষণ রাখার পরে স্নান করে নিন। তবে চেষ্টা করুন যত বেশিক্ষণ সম্ভব রাখা যায় ততই মঙ্গল। এই পদ্ধতি আপনার শরীরের তাপ বাইরে বের করে দেবে। শরীরকে শীতল করে দেবে এবং নার্ভাস সিস্টেমকে ঠিক করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। এছাড়াও চন্দন একাগ্রতা নিয়ে আসে। তাই পড়াশোনা বা যেকোন কাজে মন বসাতে চন্দন এর জুড়ি মেলা ভার।
চতুর্থ উপায়:
শীতল শ্বাস। এই আসনটি আপনি যেকোনো ভঙ্গিমায় বসে অথবা চেয়ারে বসেই করতে পারবেন। প্রথমে জ্বিভ বাইরে বের করুন এবং দুদিক থেকে ভাঁজ করে রাখুন। এবারে মুখ দিয়ে শ্বাস টেনে নিন। তারপর ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস ত্যাগ করুন। এক একবারে ৮ থেকে ১০ বার করে স্বাস ছাড়া ও নেওয়া করতে পারেন। এটির মাধ্যমে আপনার দেহ ও মন দুটিই সম্পূর্ণ রূপে শান্ত হবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
এন্ডোস্কোপির প্রয়োজনীয়তা, খরচ, সময় ও অন্যান্য বিষয়ে জানুন
মাথার সিটি স্ক্যান এর প্রয়োজনীয়তা
লিভার ফাংশন টেস্ট এর প্রয়োজনীয়তা, খরচ এবং অন্যান্য বিষয়
সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই এর পার্থক্য
পি ই টি স্ক্যান করার প্রয়োজন, পদ্ধতি, খরচ, সময় এবং অন্যান্য
পঞ্চম উপায় :
দেশি গরুর ঘী খুব উপকারী এবং পিত্তদোষ নাশক। তাই ঘী প্রতিদিন ভাতের পাতে রাখার চেষ্টা করুন। এছাড়া ঘী আপনার ইমিউনিটি পাওয়ার কে শক্তিশালী করবে।
সর্বদা মনে রাখবেন যুবক বয়সে কিন্তু পিত্ত দোষ বা সমস্যা বেশি করে দেখা দেয়। কারণ এই সময়ে মানুষ বেশি একটিভ থাকে। খাওয়া দাওয়ার নিয়ম মানা হয় না। নিয়মিত শরীরচর্চার করে উঠতে পারে না। অতিরিক্ত কাজের প্রেসারে চিন্তা ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয় কিম্বা ভুলভাল খাদ্য অভ্যাস এই রোগের মুখ্য কারণ হয়ে ওঠে।
তাই যতটা পারা যায় নিয়ম করে খাবার খাওয়া, সময়মত খাবার খাওয়া, উপযুক্ত খাদ্য খাওয়া, পাচনে উপযুক্ত খাদ্য খাওয়া, সময়মত শারীরচর্চা করা এবং চিন্তা মুক্ত থাকা বিশেষভাবে প্রয়োজন সমস্যা থেকে দূরে।
0 মন্তব্যসমূহ