কেন ইচ্ছাশক্তি হেরে যায় ...
আমরা যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিই। তখন সেটাকে সম্পূর্ন করার জন্য চেষ্টা করি প্রথমার্ধে। কিন্তু পরের দিকে গিয়ে সেই ইচ্ছা শক্তিটা কোন কারণে হারিয়ে যায়। এটা কেন হয় কিছুতেই বুঝতে পারিনা।
যদি কোন বিষয়ে মনে করি যে এটার প্রয়োজন আছে, এটার গুরুত্ব আছে জীবনে, এটা না করলে কোন ভাবেই এগোনো সম্ভব নয়। তারপরেও কিছু দিন পর এর গুরুত্বটা কম করে দেখার চেষ্টা করি।
পিছিয়ে যায় মন
এটা কেন হয় বুঝতে পারি না। যেমন ধরুন যদি মনে করি যে আমার স্বাস্থ্য খারাপের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যের চর্চা করা, স্বাস্থ্যের জন্য কিছু ভাবা বা পরিশ্রম করা এগুলো করলে আমার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। এই জিনিসগুলো যতই ভাবি না কেন প্রথমার্ধে ইচ্ছাশক্তি যথেষ্ট শক্তশালী থাকে। তারপরে হঠাৎ করেই মনের ভাবনা গুলির পরিবর্তন হতে থাকে।
আর মনে হয় যেন, এটাতে তেমন কোনো লাভ হবে না। সম্ভবত আমি ঠিক করছি না। এমনই নানান রকম অজুহাত দেখিয়ে মন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি এড়িয়ে যেতে থাকে। ঘুরে যেতে থাকে সঠিক পথ থেকে। তখন আর ইচ্ছা করে না ওই কাজগুলো করি। অথচ জানার পরেও যে এগুলো করলে আমার উপকার হবে তারপরও কিন্তু এগুলো থেকে পিছিয়ে যায় মন। এটা কেন বা কি কারনে হয় এই সম্বন্ধে খুব জানা খুব প্রয়োজন।
গতানুগিক জীবন
প্রথমে আপনি আপনার মনকে প্রশ্ন করুন, যে কাজটা আপনি করতে চলেছেন, প্রথমেই সেটার জন্য যতটা শক্তি প্রয়োজন ছিল মনের দিক থেকে সেটা আপনি দেখিয়েছেন। কিন্তু তারপরে সেই কাজটি ক্রমাগত করে যাওয়ার জন্য যে কঠিন একটা ইচ্ছা শক্তির প্রয়োজন হয়, সেটা কি আপনি দেখাতে পেরেছেন।
পুরনো লাইফস্টাইল
মনে করুন আপনি ছোট থেকেই একটা গতানুগিকভাবে জীবন কাটিয়েছেন। এবার হঠাৎ করেই আপনি দেখলেন আপনি মোটা হয়ে গেছেন। তাই আপনি একজন ডায়েটিশিয়ানের কাছে গেলেন এবং তার কাছে একটা ডায়েট চার্ট নিলেন। তিনি একটা বড় লম্বা লিস্ট আপনাকে ধরিয়ে দিলেন। এবার আপনি হঠাৎ করে সেটাকে ফলো করা শুরু করলেন সবকিছু বাদ দিয়ে। মানে আপনি এতদিন যা খেয়ে এসেছেন। যে পদ্ধতি ফলো করেছেন। যে যে মেনুগুলো থাকতো আপনার টেবিলে, সবকিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে একটা ডায়েট চার্ট যেটা খুব একটা পছন্দের নয় সেই ডায়েট চার্ট ফলো করতে শুরু করলেন।
এবার প্রশ্ন হলো এটা আপনি কতদিন করতে পারবেন? দুই, চার দিন বা দশ দিন, খুব বেশি হলে দুই সপ্তাহ। কিন্তু তারপরেই আপনার ভেতরের সেই ইচ্ছাশক্তি কমতে থাকবে। কারণ, আপনাকে পুরনো লাইফস্টাইলের যে খাওয়া-দাওয়া সেটা টেনে বেড়াবে। তাই আপনি নতুন কিছু আহার গ্রহণ করতে পারবেন না সহজেই।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
আমাদের লাইফ স্টাইল
আসলে এর কারণ হলো প্রথম ধাক্কায় কোন কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আপনি বা আমি, আমরা সকলেই যেভাবে জীবন-যাপন করে আসছি, সেই লাইফ স্টাইল কে চট করে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এটা একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। এখানেই কিন্তু আপনাকে পরিবর্তন আনতে হবে। তবে এতটাই কম পরিমাণে এই পরিবর্তনটা আনতে হবে যে সেটা আমাদের লাইফ স্টাইলে কোন আঘাত ফেলবে না।
অর্থাৎ আমাদের ইচ্ছাশক্তি কখনই সেটা করতে গিয়ে দুর্বল হবে না। তাই এটা আস্তে আস্তে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জুড়ে যেতে থাকবে। আর আমরা এটাকে ফলো করতে পারব। ধীরে ধীরে করা পরিবর্তন কখনোই বিফলে যাবে না। কিন্তু কিভাবে সেটা হবে?
আপনার পছন্দের
যেমন ধরুন আপনি নতুন একটা ডায়েট চার্ট ফলো করতে চাইছেন। সেখানে দেখে নিন আগে আপনার পছন্দের কি কি রয়েছে। অর্থাৎ আপনি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যা যা খেতে পছন্দ করেন তার মধ্যে কিছু রয়েছে কিনা। যদি কিছু থেকে থাকে সেগুলোতে তালিকায় রাখুন এবং তার সাথে ডায়েটে দেওয়া নতুন মাত্র একটা খাদ্যকে যুক্ত করুন।
এবার টানা এক সপ্তাহ ধরে এই তালিকায় থাকা খাদ্য খেতে থাকুন। এতে হলো, আপনার ডায়েট চার্ট এর মধ্যে থাকা একটি খাদ্য আসলো, আর বাকিগুলো আপনার পছন্দের থেকে গেল। তাহলে সম্পূর্ণ তালিকা আপনি একবারে গ্রহণ করলেন না। এরপরে পরের সপ্তাহে আবার আরেকটি ডায়েটে থাকা খাদ্য আপনার নতুন খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। এভাবে প্রতি সপ্তাহে এই পদ্ধতি ফলো করুন। তাহলেই ডায়েট চার্টে থাকা সমস্ত খাদ্য আপনার নতুন খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না
এবার দেখুন আপনি একটু একটু করে নতুন খাদ্য তালিকার মধ্যে ঢুকছেন। কিন্তু আপনার মন কোনভাবেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না। কারণ মন খাদ্য তালিকা টি ধীরে ধীরে গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এটাকেই স্বাভাবিক মনে করে নিতে শুরু করেছে। মানে বলতে চাইছি আপনি যদি একবারই পরিবর্তন করতে চান, সেটা আপনি টানা এক সপ্তাহর বেশি মেনে চলতে পারবেন না।
কিন্তু আপনি যদি ধীরে ধীরে পরিবর্তন করতে থাকেন। অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে একটি করে খাদ্য আপনার ডায়েট চার্ট এর মধ্যে ঢুকিয়ে নিলে, ধীরে ধীরে আপনি একদম নতুন আর আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় একটা ডায়েট ফলো করতে পারবেন।
অগ্রসর হতে পারি
এভাবেই একটা অভ্যাস তৈরি করতে পারলে কোনভাবেই আপনার মন আর পুরনো ডায়েট চাট এর দিকে অগ্রসর হবে না। এই ভাবেই আমরা কিন্তু সব কাজেই অগ্রসর হতে পারি। যেমন খাদ্য তালিকায় আমরা প্রতিনিয়ত একটি একটি করে খাদ্য যোগ করেছি আর নতুন খাদ্যতালিকায় চলে এসেছি।
তেমনি যেকোনো কাজেই আমরা অগ্রসর হই না কেন সেটাকে আমরা অল্প অল্প করে যদি গ্রহণ করতে থাকি। তবে কিন্তু আমরা যে উৎসাহ নিয়ে এগিয়েছিলাম। ঠিক সেই উৎসাহ নিয়েই পরবর্তী দিনেও সেই কাজগুলোতে টিকে থাকতে পারবো। এটাকেই খুব স্বাভাবিক মনে হবে তখন।
ইচ্ছাশক্তি
সবার আগে আমাদের এটা মেনে নিতে হবে যে ইচ্ছাশক্তিকে হারিয়ে দিতে পারে আমাদের অভ্যাস। কারণ অভ্যাস একটা বায়োলজিক্যাল ব্যাপার। আর ইচ্ছাশক্তি হলো হঠাৎ করে কোন কিছু দেখলাম, জানলাম বা প্রয়োজন বোধ করলাম আর সেখান থেকে আমাদের তাগিদটা জন্মালো। সেটাই হচ্ছে ইচ্ছাশক্তি।
ইচ্ছাশক্তি কখনোই অভ্যাস এর উপরে তার প্রভাব রাখতে পারে না। যতক্ষণ না আমরা সেটাকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে যাব। অর্থাৎ যদি আমরা হঠাৎ করে কোন কিছু চাপিয়ে দিয়ে আমাদের অভ্যাস কে বদলানোর চেষ্টা করি। তবে সেটা অল্প দিনের জন্যই সম্ভব হবে। কিন্তু দীর্ঘদিনের জন্য এটা সম্ভব হবে না কখনোই।
চতুরতার সঙ্গে
তাই পুরনো অভ্যাসকে একবারেই পরিবর্তন না করতে গিয়ে, ধীরে ধীরে চতুরতার সঙ্গে সেটাকে যদি পরিবর্তন করার চেষ্টা করি। তবে সেটা কিন্তু সম্ভব হবে এবং আগামীতে সেটাই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যাবে।
তাই আপনি একবারেই সম্পূর্ণ ডায়েট চার্ট ফলো করতে পারবেন না। অথবা জিমে গিয়ে ১ ঘন্টার জায়গায় টানা ২ ঘন্টা এক দিনেই ব্যায়াম শুরু করতে পারবেন না। কারণ টানা দু ঘণ্টা ব্যায়াম করলে আপনার পেশিতে ব্যথা হবে। আর আপনি খুব সহজেই ব্যায়াম ছেড়ে দেবেন।
সুতরাং ধীরে ধীরে আপনি সেটাই করুন যেটা আপনার শরীর এবং মন দুটোই সহ্য করে নিতে পারবে। তাই অভ্যাসকে বজায় রেখে ইচ্ছাশক্তিকে ধীরে ধীরে প্রয়োগ করা শিখুন। তবেই জীবন জয় হবে এবং যেকোনো কাজ থেকে আমরা সফলতা অর্জন করব সহজেই। এবং সেটাকে দীর্ঘদিন টেনে নিয়ে যেতে পারবো জীবনের প্রয়োজনে।
যদি আজকের আলোচনা (কেন ইচ্ছাশক্তি হেরে যায় অভ্যাসের কাছে ?) থেকে আপনার কিছুমাত্র উপকার হয় তবে অবশ্যই প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমরা এখন ইউটিউবে আছি, সার্চ করুন SACHETAN JIBAN
এছাড়াও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও সচেতন জীবনকে পেয়ে যাবেন আপনার সুস্বাস্থ্য ও সচেতনতার প্রয়োজনে।
বি: দ্রঃ এই লেখাটি কেবল সাস্থ্য সুরক্ষার তথ্য সরবরাহ করে মাত্র। এটি কোনওভাবেই যোগ্য চিকিৎসার মতামতের বিকল্প নয়। আরও তথ্যের জন্য সর্বদা বিশেষজ্ঞ বা আপনার নিজস্ব চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
0 মন্তব্যসমূহ