মাথার সিটি স্ক্যান
মাথার একটি সিটি স্ক্যান সাধারণ এক্স-রে পরীক্ষার চেয়ে আরও বিশদ বিবরণ সরবরাহ করতে পারে। কারণ মস্তিষ্কের ও শরীরের অন্যান্য ক্ষেত্র গুলি বিশদে পরীক্ষার জন্য এটি বিশেষ ভাবে নির্মীত একটি অত্যাধুনিক রোগ পরীক্ষণ প্রযুক্তি।
কখন দরকার
ডক্টর যদি ভাবেন মস্তিষ্কে কোন জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে অথবা যদি কোন মাথার চিকিৎসা চলে থাকে তবে সেটিতে কেমন ফল মিলছে জানতে সিটি হেড স্ক্যান এর সাহায্য নেওয়া হয়।
মাথার সিটি স্ক্যান এর প্রয়োজনীয়তা
মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যা জনিত কারণে এই সিটি স্ক্যান পরীক্ষাটি করা হয়ে থাকে। বিশেষ বিশেষ কারণ গুলির মধ্যে হলো :
- মাথার টিস্যুতে আঘাত
- মাথায় আঘাত লাগা
- মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট বাঁধা
- হাড়ের ক্ষয় বা ফ্র্যাকচার
- স্ট্রোকের লক্ষণ দেখেতে পেলে
- সম্ভাব্য মস্তিষ্কের টিউমার বা চিকিৎসার পর মস্তিষ্কের টিউমার সঙ্কুচিত হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য
- জন্মগত ত্রুটি মূল্যায়ন করতে
- হাইড্রোসফালাসের মত রোগ নির্ণয় করতে
- কোনও তরল জমে মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকেলের বৃদ্ধি হয়ে থাকলে
- যদি উপরে বর্ণিত যেকোনো ধরনের একটি সমস্যা চিহ্নিত করা যায় তবে ডাক্তার সঠিক কারণ নির্ণয় এর জন্য একটি মাথার সিটি স্ক্যানের আদেশ দিতে পারেন।
মাথার সিটি স্ক্যান পরীক্ষা পদ্ধতি
আপনার ডাক্তার অবশ্যই আপনাকে পরীক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু ধারনা দেবেন।
সঠিক সময়ে আপনাকে হসপিটাল বা কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পৌঁছাতে হবে। পরীক্ষার প্রয়োজনে একটি হসপিটালের নির্দিষ্ট পোশাক (গাউন) পড়তে হবে।
শরীরে থাকা কোনো অতিরিক্ত বস্তু যেমন গহনা, ঘড়ি বা অন্যান্য যেকোনো ধরনের অলংকার খুলে রাখা একান্ত প্রয়োজন। কারণ এগুলি পরীক্ষায় বাধা প্রদান করতে পারে।
নির্দিষ্ট সময়ে আপনাকে পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার ঘরে নিয়ে আসা হবে। এখানে রাখা সিটি স্ক্যান মেশিন টি দেখতে অনেকটা বড় ড্রামের মতো। যেটির মাঝখানে একটি বড় গোল আকারের জায়গা আছে যেখানে একটা সরু লম্বা টেবিল ঢুকে যেতে পারে। এইখানে শুয়ে পরীক্ষাটি হয়।
এবার আপনাকে ধীরে ধীরে ওই টেবিলে শুতে হবে। এই ঘরের সামনে আরেকটি ঘর থাকবে যেখানে একজন টেকনিশিয়ান মেশিনটি অপারেট করবেন।
টেকনিশিয়ানের সামনে একটি উন্নত মানের কম্পিউটার রাখা থাকবে যেটির মাধ্যমে এই বড় মাপের সিটি স্ক্যান মেশিন টি অপারেট করা সম্ভব হয়।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে যদি আপনার কোনো রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তবে আপনি সরাসরি টেকনিশিয়ানের সাথে ইশারায় কথা বলতে পারবেন। সমস্যা হলে পরীক্ষাটি সেখানেই বন্ধ করা হবে। যদিও তেমন কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
পরীক্ষার সময়ে তিনি আপনাকে কিছু নির্দেশ দিতে পারেন, যেমন : শ্বাস ছাড়া অথবা নেওয়া। এছাড়াও যদি পরীক্ষার সময় রোগী সামান্য নড়াচড়া করেন তবে পরীক্ষার সমস্যা হওয়ার কারণে তিনি শান্ত থাকার নির্দেশ দিতে পারেন।
পরীক্ষা শুরু হলে মেশিনটি বিভিন্ন আকারে ছবি সংগ্রহ করবে এবং অন্য ঘরে রাখা উন্নত মানের কম্পিউটারের মধ্যে সেই ছবিগুলোকে প্রেরণ করতে থাকবে। এবার কম্পিউটারের স্টোর হওয়া ছবিগুলি এখানে রাখা একটি প্রিন্টারের মাধ্যমে প্রিন্ট হবে। এগুলি এক্সরে ফিল্ম এর মতোই দেখতে।
এগুলোর মাধ্যমে মাথার ভেতরের বিভিন্ন স্তরের ছবিগুলি প্রকাশ পাবে। আর এই ফিল্মগুলি দেখে রেডিওলজিস্ট পরীক্ষা করে দেখবেন মাথায় কোন সমস্যা আছে কিনা।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
এন্ডোস্কোপির প্রয়োজনীয়তা, খরচ, সময় ও অন্যান্য বিষয়ে জানুন
লিভার ফাংশন টেস্ট এর প্রয়োজনীয়তা, খরচ এবং অন্যান্য বিষয়
সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই এর পার্থক্য
পি ই টি স্ক্যান করার প্রয়োজন, পদ্ধতি, খরচ, সময় এবং অন্যান্য
পরীক্ষায় কোন সমস্যা হয় ?
সিটি স্ক্যান সবসময়ের জন্যই নিরাপদ একটি পরীক্ষা পদ্ধতি। এই পরীক্ষায় তেমন কোনো রিস্ক বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।
তবে কিছু কিছু বিষয় অবশ্যই নজর রাখা উচিত যেমন : কোন ব্যক্তি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে সিটিস্ক্যান পরীক্ষাটি করে থাকেন, তবে মাত্রাতিরিক্ত রেডিয়েশনের প্রভাবে তার ক্যান্সার পর্যন্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে মনে রাখবেন দু একবার কেউ যদি সিটি স্ক্যান করে থাকেন সে ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা একদমই কম। কারণ এক্ষেত্রে যে রেডিয়েশনের প্রয়োগ হবে, শরীরে সেটির প্রভাব পড়বে না বললেই চলে।
একারণেই ডাক্তার সব সময় প্রেগন্যান্ট মহিলাদের কে এই পরীক্ষা এড়িয়ে যেতে বলেন। কারণ পেটের বাচ্চার রেডিয়েশনের প্রভাব এ ক্ষতি হতে পারে।
এছাড়াও আরেকটি সমস্যা হতে পারে সেটি হল ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হওয়া। তবে সাধারন সিটি স্ক্যান এর ক্ষেত্রে এটা হওয়ার কথা নয়। এটা হয় শরীরে কনট্রাস্ট ডাই ইনজেকশন দেওয়ার পর। যদি কোন ব্যক্তির সিটি স্ক্যান অফ ব্রেন করার সময় কনট্রাস্ট ইনজেকশন দেওয়া হয় তবে সেক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এই সমস্যা তাদের হতে পারে যাদের এলার্জির সমস্যা আছে।
কনট্রাস্ট ডাই
কনট্রাস্ট ডাই একটি লিকুইড ওষুধ। যেটি ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হয়। যাতে ব্রেনের ক্ষতিকারক দিকগুলি আরো ভালোভাবে পরীক্ষা করা যায়। এমন কিছু কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় বিশেষ কোন জটিল রোগ সিটি স্ক্যান মেশিনে ধরা পড়ে না। সে ক্ষেত্রে এই কনট্রাস্ট ইনজেকশন দেওয়া হয়ে থাকে।
কত সময় লাগে ?
সিটি স্ক্যান অফ ব্রেন পরীক্ষাটিতে সময় লাগে প্রায় 5 থেকে 10 মিনিটের মতন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এর থেকে কম বা বেশি সময় লাগতে পারে। তবে মূলত 5 থেকে 10 মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে থাকে।
খরচ কত হয় ?
মাথার সিটি স্ক্যান পরীক্ষাটি খরচ হয় প্রায় 1 থেকে 3 হাজার টাকার মতো। তবে স্থান, কাল এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে খরচ কিছুটা কমতে বা বাড়তে পারে। মনে রাখবেন সম্পূর্ণ অনুমানের ভিত্তিতে খরচটি বলা হয়েছে।
পরীক্ষার পরে
যেহেতু পরীক্ষাটি 5 থেকে 10 মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যায়। আর যেদিন পরীক্ষার জন্য যাওয়া হয়, উক্ত দিনেই পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়, তাই পরীক্ষাটির পরে রোগী খুব স্বাভাবিকভাবেই বাড়ি ফিরতে পারবেন ও স্বাভাবিক কাজ করতে পারবেন।
আপনার মতামত
যদি আজকের আলোচনা থেকে আপনার কিছুমাত্র উপকার হয় তবে অবশ্যই প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমরা এখন ইউটিউবে আছি, সার্চ করুন SACHETAN JIBAN
এছাড়াও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও সচেতন জীবনকে পেয়ে যাবেন আপনার সুস্বাস্থ্য ও সচেতনতার প্রয়োজনে। সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন।
এছাড়াও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও সচেতন জীবনকে পেয়ে যাবেন আপনার সুস্বাস্থ্য ও সচেতনতার প্রয়োজনে। সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন।
4 মন্তব্যসমূহ
মমতাজ টিকিটটা আমি কোন জায়গায় করলে ভালো হবে
উত্তরমুছুনটাংগাইল জেলার কোথায় মাথা স্কান করে জানাবেন প্লিজ
উত্তরমুছুনমাথার ছিটি ইসকেন করতে কত টাকা লাগে
উত্তরমুছুনফরিদপুর কি সিটি স্কান করা হয়
উত্তরমুছুন