বন্ধ্যাত্ব দূর করতে এইচ এস জি
সফল মাতৃত্ব লাভ সব সময় খুব সহজেই ঘটে না। তার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কারণ এই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মহিলাদের শারীরিক জটিলতা অর্থাৎ বন্ধ্যাত্ব। এই কারণেই প্রয়োজন হয় বন্ধ্যাত্ব দূর করতে এইচ এস জি নামক পরীক্ষাটির।
সবারই সাদ বা আল্লাদ থাকে যে তার একটি ফুটফুটে সন্তান আসবে কোলজুড়ে। কিন্তু অনেক সময় সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার নিজের শরীর। কিভাবে বাধা হয়, সেটা নিয়েই আজকে আলোচনা করব।
আলোচনার বিষয় বন্ধ্যাত্ব দূর করতে এইচ এস জি (HSG Test) পরীক্ষার গুরুত্ব এবং অন্যান্য বিষয়। এই পরীক্ষায় নির্ধারণ করা হয় বা জানতে পারি ফ্যালোপিয়ান টিউব অথবা জরায়ুর মধ্যে কোন সমস্যা আছে কিনা। অর্থাৎ এদের মধ্যে যদি পারস্পরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে কোনো কারণে সে ক্ষেত্রে বাচ্চা জন্মের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা দেখা দেয়।
অবরুদ্ধ বা বন্ধ ফলোপিয়ান টিউব বা একটি অস্বাভাবিক জরায়ু গহ্বর বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। কারণ এর ফলে শুক্রাণু আপনার ডিমের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হবে না বা নিষিক্ত ডিমগুলি আপনার জরায়ুতে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে না। হিস্টেরোসালপোগ্রাফি, বা এইচএসজি হল সেই পরীক্ষা যার মাধ্যমে দেখা যায়, জরায়ুর অভ্যন্তরীণ আকারের রূপরেখা এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবগুলি অবরুদ্ধ রয়েছে কিনা। এটি একটি এক্স-রে পরীক্ষা।
কিভাবে হয় পরীক্ষাটি
প্রথমে এক্সরে টেবিলে আপনাকে শোয়ানো হবে। একটি রঞ্জক আপনার যোনিতে প্রবেশ করানো হবে। যেটির মাধ্যমে জানা যাবে আপনার শারীরিক কোন সমস্যা আছে কিনা গর্ভধারণের জন্য।
একটি পাতলা নল (Catheter) যোনি এবং জরায়ুর মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। এক ধরনের লিকুইড বা তরল পদার্থ জরায়ুর মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। এক্স-রে বা ফ্লুরোস্কোপির সাহায্য নিয়ে এই রঞ্জকটিকে লক্ষ্য করা হয়।
রঞ্জকটি ভেতরে প্রবেশ করানোর পর এক্সরে মেশিন এর সাহায্য নিয়ে দেখা হয় রঞ্জক টি যাত্রাপথে কোন বাধা পাচ্ছে কিনা। অর্থাৎ রঞ্জক টি সব জায়গায় ঠিকমত পৌঁছেছে কিনা। এটি হলো মূল পরীক্ষাটি।
এই রঞ্জকটিকে এক্স-রেতে সাদা রঙের দেখায়। এই রঞ্জকটি যেখান দিয়ে যায় সেখানেই সাদা রংয়ের চিত্র প্রদর্শিত হয়। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে যাত্রাপথে কোন অবরোধ আছে কিনা অর্থাৎ কোন জায়গায় আটকে গেল কিনা তা এটার মাধ্যম দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ এটি জরায়ুতে এবং তার পরে নলগুলির মধ্যে চলে যায়।
জরায়ুর আকারে যদি কোনও অস্বাভাবিকতা থাকে তবে রঞ্জক টি আর এই পথে এগোতে পারবে না। তখনই বোঝা যাবে যে কোথায় সমস্যাটি রয়েছে। যদি নলটি খোলা থাকে তবে রঞ্জক ধীরে ধীরে এটি পূরণ করে।
কিভাবে প্রস্তুতি নেব?
মনে রাখবেন মানসিক প্রস্তুতি সবার আগে প্রয়োজন। তারপরে শারীরিক প্রস্তুতি। আর মনে রাখবেন এটি একটি সাধারণ মানের এক্সরে পরীক্ষার মতই। পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার অন্তত 2 ঘণ্টা আগে কিছু খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। কারণ এর মধ্যে কিছু খাওয়া যাবেনা।
পরীক্ষার আগে
পরীক্ষাটির আগে হসপিটালের গাউন্ড পড়তে হবে। যেটি এই পরীক্ষাটি করতে একটি সুবিধাজনক পোশাক। এর সাথে আপনাকে পেইন কিলার জাতীয় বা ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হবে। কারণ এটি একটি এমন পরীক্ষা যেটিতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
খরচ কত হয়
বন্ধ্যাত্ব দূর করতে এইচ এস জি পরীক্ষাটি সাধারণ মানের একটি এক্সরে পরীক্ষার থেকে একটু বেশি খরচসাপেক্ষ। এটিতে খরচ হয়ে থাকে প্রায় দুই থেকে চার হাজার টাকার মতো। তবে স্থান এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী খরচ কম বা বেশি হয়ে থাকে।
ব্যথা হয় ?
হ্যাঁ, অবশ্যই পরীক্ষাটি তে ব্যথা হয়। তবে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ ব্যথানাশক ঔষধ (Pain killer) ডাক্তার বা টেকনিশিয়ান দিয়ে থাকেন। তাই অযথা ব্যথা নিয়ে ভয় পাবেন না। কিছু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে ব্যথা একটু বেশি হয়ে থাকে। তবে ধীরে ধীরে সেটি চলে যায়।
কত সময় লাগে ?
যদিও পরীক্ষাটি নিয়মিত এক্সে পরীক্ষার মতো নয়। তবুও পরীক্ষার্থীদের খুব বেশি সময় লাগে না। মোটামুটি ৫ মিনিট থেকে ১৫ মিনিটের মতো সময় লেগে থাকে পরীক্ষাটি সম্পন্ন হতো।
পরীক্ষার পর
বন্ধ্যাত্ব দূর করতে এইচ এস জি পরীক্ষার পর আপনি নির্দ্বিধায় বাড়ি ফিরতে পারবেন। তবে অবশ্যই পরিবারের কারোর সাহায্য প্রয়োজন হয়।
যদি আজকের আলোচনা থেকে আপনার কিছুমাত্র উপকার হয় তবে অবশ্যই প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমরা এখন ইউটিউবে আছি, সার্চ করুন SACHETAN JIBAN
এছাড়াও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও সচেতন জীবনকে পেয়ে যাবেন আপনার সুস্বাস্থ্য ও সচেতনতার প্রয়োজনে। সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন।
0 মন্তব্যসমূহ