H2

কোলোনোস্কপির প্রয়োজনীয়তা, খরচ, সময় ও অন্যান্য বিষয়ে জানুন l What is Colonoscopy in Bangla

কোলোনোস্কপির-প্রয়োজনীয়তা


আধুনিক জীবনে জটিল রোগের প্রভাব আমাদের বিভিন্ন রকম রোগ পরীক্ষার জন্য বাধ্য করে। কোলোনোস্কপি পরীক্ষা পদ্ধতি তাদের মধ্যে একটি। চলুন আজকে জেনে নিই কোলোনোস্কপির প্রয়োজনীয়তা, খরচ, সময় ও অন্যান্য বিষয়ে। পেটের সমস্যা যেমন আলসার, পলিপ, এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত শনাক্তকরণের জন্য কোলোনোস্কপির ভূমিকা অসীম।


কোলোনোস্কপি কী ? What is a Colonoscopy?

কোলনোস্কপির সময় আপনার ডাক্তার আপনার পেটের অন্ত্র বা কোলনের অস্বাভাবিকতা বা রোগ পরীক্ষা করতে একটি পাতলা, নমনীয় নলের অগ্রভাগে বসানো ক্যামেরা ব্যবহার করে পেটের সমস্যা জানার চেষ্টা করেন। এই পদ্ধতিতে রোগীর অন্ত্র (Colon) এর বিভিন্ন রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।

কোলন হ'ল গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের সর্বনিম্ন অংশ যার একটি দিক ক্ষুদ্রান্ত্র এর সাথে যুক্ত ও অন্য দিকটি মলদ্বারের সাথে সংযুক্ত থাকে। মলদ্বার বা পায়ুদ্বার হল সেই জায়গা যেখানে শরীরের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন হয়।

কোলনোস্কপির সময় আপনার ডাক্তার বায়োপসির জন্য টিস্যুর নমুনাও নিতে পারেন যদি তিনি পলিপ বা গ্রোথ (Polyp or Growth) এর মতো অস্বাভাবিক টিস্যু লক্ষ্য করেন।


কোলোনোস্কপির প্রয়োজন কী ?


যেহেতু পরীক্ষাটিতে ক্যামেরার ব্যবহার হয় তাই যেকোনো জটিল থেকে জটিলতর সমস্যাগুলি সরাসরি কম্পিউটার স্ক্রিনে ডাক্তার খুব স্পষ্টভাবে দেখতে পান।

আর তাই রোগ নিরীক্ষণের ব্যবস্থাও খুব দ্রুত হয় এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। বিভিন্ন জটিল সমস্যা যেমন পলিপ, আলসারেটিভ কোলাইটিস জাতীয় সমস্যা এমনকি ক্যান্সার শনাক্তকরণের জন্য এই পরীক্ষার প্রয়োজন আছে।

মনে রাখবেন এই সমস্ত জটিল রোগগুলি খুব দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে খুজে বের করার জন্য কোলোনোস্কপির প্রয়োজন হয়। 

কোলনোস্কপির সময় অস্বাভাবিক টিস্যু লক্ষ্য করলে তখনই বায়োপসি নিতেও খুব সুবিধা হয়।


কোলোনোস্কপির জন্য প্রস্তুতি

পরীক্ষাটির জন্য প্রথমে চাই মানসিক প্রস্তুতি। কারণ পরীক্ষাটি করার আগে অনেক রকম ভয় বা দ্বন্দ্ব মনে কাজ করতে পারে। তাই এগুলোকে আগে কাটিয়ে উঠুন।

কারণ আপনি চান সুস্থতা। আর সুস্থ হওয়ার জন্য সামান্য অসুবিধা বা অসস্তিভোগ করা খুবই সামান্য ব্যাপার। কেননা পরীক্ষাটি করতে সামান্য হলেও অসস্তিবোধ হতে পারে। 

এবার ধরা যাক আপনি যদি প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেন তবে আপনাকে কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পরীক্ষাটি হওয়ার অন্তত দুদিন আগে থেকে আপনাকে তরল খাদ্য বেশি করে খেতে হবে। যাতে পেটের বর্জ্য বা মল পরিষ্কার হয়।

আর পরীক্ষাটির দিনে আপনাকে একটি তরল ঔষধ দেওয়া হবে। যেটি খেলে আপনার বারে বারে পায়খানা হতে থাকবে। এতে করে আপনার অন্ত্র বা কোলন পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর পরীক্ষাটি করতে খুব সুবিধা হবে।

মনে রাখবেন আপনার অন্ত্রে বা কোলনে যদি মল থেকে থাকে, তবে কিন্তু পরিস্কার ছবি আসবে না। আর পরীক্ষা করতে অসুবিধা হবে। তাই ভালো ভাবে আপনার পেট পরিষ্কার হবে, তত ভালো পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। 


কোলোনোস্কপি কিভাবে হয় ?

কোলনোস্কোপির ঠিক আগে আপনাকে হাসপাতালের একটি গাউন (বিশেষ ধরনের পোশাক) পরতে হতে পারে। এবার একটি টেবিলে আপনাকে সরানো হবে। একটি নমনীয় লম্বা নল আপনার পায়ুদ্বার (Rectum) দিয়ে পেটের ভেতরে প্রবেশ করানো হবে।

তবে ভয় পাবেন না এই নলটি আপনার পায়ু পথে চালনা করার আগেই লোকাল এনেসথেসিয়া বা এক ধরনের জেল ব্যবহার করা হবে, যাতে আপনার পায়ুপথ সামান্য অবস থাকে এবং আপনার ব্যথা না লাগে বা কম লাগে।

যে নলটি পায়ুদ্বারে প্রবেশ করানো হবে, সেটির মুখে একটি এলইডি বাল্ব থাকবে আর তার সাথে একটি ক্যামেরা লাগানো থাকবে। এই ক্যামেরা কোলোনের ভেতরে গিয়ে ছবি তুলতে থাকবে এবং ওই ঘরে রাখা কম্পিউটারে আপনার অন্ত্রের বা পেটের ভেতরকার ছবিগুলি দেখা যাবে সরাসরি। 

এই ছবি দেখে আপনার অন্ত্রের পরিস্থিতি বা পেটের সমস্যা খুব ভালোভাবে পর্যালোচনা করা যাবে। বিশেষ কোন সমস্যা যেমন পলিপ, গ্রোথ, আলসার ইত্যাদি সমস্যা থাকলে বায়োপসি নেওয়া হয়।

বায়োপসি পরীক্ষা এই নলটির মাধ্যমেই করা হয়। অর্থাৎ এই নলের মাধ্যমেই আর একটি শুরু নল পেটে ঢোকানো হয় এবং সমস্যার স্থান থেকে মাংস টুকরো ছোট ছোট আকারে কেটে নেয়া হয়। যা আপনি বুঝতেও পারবেন না।

পরীক্ষাটি চলাকালীন আপনার যদি কোন সমস্যা হয় তবে আপনি ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিতে পারবেন। প্রয়োজনে পরীক্ষাটি থামাতে বলতে পারবেন।

আর আপনি চাইলে আপনার পেটের সমস্যা কি বা আপনার অন্ত্রের ভেতর বা পেটের ভেতরে কি পরিস্থিতি সেটা আপনি দেখতে পারবেন আপনার সামনে রাখা কম্পিউটারের মাধ্যমে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কোলোনোস্কপির প্রয়োজন কতটা সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য।

পরীক্ষাটি চলার সময় আপনি জেগে থাকবেন। 

ভালোভাবে দেখার জন্য আপনার অন্ত্রের ভেতরে বিশেষ ধরনের গ্যাস দেওয়া হবে ওই নলের মাধ্যমে। ফলে আপনার কোলন ফুলে উঠবে ও সামান্য অস্বস্তি বোধ হতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। পরীক্ষাটি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ওই গ্যাস বের করে দেওয়া হয়।


পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

এই পরীক্ষায় কোনও রেড়িয়েশন দেওয়া হয় না। তাই এই পরীক্ষার পার্শপ্রতিক্রিয়া তেমন কিছু নেই। তবে পরীক্ষাটি হওয়ার পর কিছুক্ষণের জন্য পেতে বা পায়ুদ্বারে সামান্য ব্যথা হতে পারে। 

তবে সেটা খুবই স্বাভাবিক আর খুব অল্প সময়ের জন্য তা স্থায়ী হয়। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে রোগী দুই থেকে চার ঘণ্টা হসপিটালে অপেক্ষা করার পরে বাড়ি ফিরতে পারেন।


কোলোনোস্কপিতে সময় লাগে?

কোলোনোস্কোপি করতে সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টার মত। তবে রোগীর শারিরীক জটিলতা থাকলে অবশ্যই সময় বেশি লাগবে।

খরচ কত হয়?

পরীক্ষাটি করতে খরচ হয় প্রায় ৪ থেকে ১০ হাজার টাকার মত। তবে সময় এবং স্থানের উপর নির্ভর করে দামের তারতম্য হতে পারে।








প্রশ্ন ও উত্তর 


কোলনোস্কোপি পরীক্ষা কি বেদনাদায়ক?

যদি প্রস্তূতি ঠিক থাকে তবে কোলনোস্কোপি মোটেও বেদনাদায়ক হবে না। প্রস্তূতি অর্থাৎ অন্ত্রের মল সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হওয়ার প্রয়োজন। তবে ব্যাথা না হলেও সামান্য অসস্তি হতে পারে। রোগী পেটের ভিতরে থাকাকালীন টিউবটি অনুভব করতে পারবেন।

কোলনোস্কোপি পরীক্ষাটির কারণ কি?

রোগীর অন্ত্রের অস্বাভাবিক লক্ষণগুলির কারণ জানতে এই পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। উপসর্গগুলির মধ্যে পায়ু পথে বা মলের সাথে রক্তপাত, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ওজন হ্রাস, ক্লান্ত বোধ করা ও অন্যান্য। 

কোলনোস্কোপির মাধ্যমে কি কি রোগ সনাক্ত করা সম্ভব?

কোলোনোস্কোপির মাধ্যমে কোলাইটিস, ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিস, ডাইভার্টিকুলোসিস, প্রাক-ক্যানসার বা ক্যান্সারজনিত কোলন পলিপ ও অন্যান্য। 

কোলনোস্কোপি পরীক্ষায় কতক্ষণ লাগবে?

কোলনোস্কোপি পদ্ধতিতে সাধারণত 30-60 মিনিট সময় প্রয়োজন। যদি বায়োপসি নিতে হয় তার উপর নির্ভর করে সময় বেশি লাগতে পারে। 

কোলনোস্কোপির পরে কতক্ষন বিশ্রামের প্রয়োজন?

কোলনোস্কোপি হওয়া রোগীর বাড়িতে পৌঁছানোর পর অন্তত ২৪ ঘন্টা বিশ্রাম নেওয়া উচিত।

কোলনোস্কোপি তে ক্যান্সার খুঁজে পায়?

অন্ত্রের একটি নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা হিসাবে এটি কোলন ক্যান্সার বা প্রাক-ক্যানসারাস পলিপ বা স্ফিতি খুব ভালো করে খুঁজে বের করার উপযোগী ভূমিকা রাখে।


যদি আজকের আলোচনা (কোলোনোস্কপির প্রয়োজনীয়তা, খরচ, সময় ও অন্যান্য বিষয়ে জানুন l What is Colonoscopy in Bangla) থেকে আপনার কিছুমাত্র উপকার হয় তবে অবশ্যই প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমরা এখন ইউটিউবে আছি, সার্চ করুন SACHETAN JIBAN
 

বি: দ্রঃ এই লেখাটি কেবল সাস্থ্য সুরক্ষা ও সচেততামূলক তথ্য সরবরাহ করে মাত্র। এটি কোনওভাবেই যোগ্য চিকিৎসার মতামতের বিকল্প নয়। আরও তথ্যের জন্য সর্বদা বিশেষজ্ঞ বা আপনার নিজস্ব চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

H2